বগুড়া : প্রকৃতিতে শিশিরবিন্দু জানান দেয় শীতের আগমনী বার্তা। আর সেই শীতের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে খেজুর রসের।
গ্রাম-বাংলার অনেক ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসলেও খেজুরের রস এখনও টিকে আছে। প্রত্যেক বছরের শীত মৌসুমেই দেখা মেলে এই খেজুর রসের। আগম খেজুরের রস পেতে গাছ পরিচর্যায় নেমেছেন বগুড়ার গাছিরা।
বগুড়ার ১২ উপজেলার মধ্যে শাজাহানপুর, আদমদীঘি, কাহালু, শেরপুর, নন্দীগ্রাম বরেন্দ্রখ্যাত উপজেলা হিসেবে পরিচিত।
খেজুরের রস নামাতে কার্তিকের প্রথম থেকেই গাছ পরিচর্যা শুরু করেছেন জেলার গাছিরা। ধাপে ধাপে চলে রস নামানোর কাজ। ইতোমধ্যে গ্রামাঞ্চলে গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস নামানোর কাজে নেমে পড়েছেন।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, এসব উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলা মিলে বগুড়ায় প্রায় ৪৩ হাজার ৫০০ মতো খেজুর গাছ রয়েছে। তবে কালের আবর্তে খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
গাছি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, শীতের সকালে মানুষ খেজুর রসে মুড়ি মাখিয়ে খেতে পছন্দ করে। গ্রামে গ্রামে চলে খেজুর রসের পায়েস, পিঠা-পুলি তৈরির ধুম। মেয়ে জামাই ও স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে বাড়ি বাড়ি চলে শীতের বাহারি পিঠা উৎসব। খেজুর রসে বানানো হয় নালী, দানাদার ও পাটালি গুড়ও।
গাছি উজ্জল শেখ, তোজাম আলী বলেন, গাছের মাথা হালকাভাবে ছেঁটে দিয়ে প্রতিদিন বিকেলে নির্ধারিত স্থানে মাটির পাত্র ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন ভোরে গাছ থেকে পাত্র নামিয়ে আনা হয়। গাছভেদে দু’থেকে চারকেজি হারে রস পাওয়া যায়। সপ্তাহে দু’ থেকে তিনদিন পরপর রস সংগ্রহ করা হয়।
গাছিরা আরও বলেন, বাণিজ্যিকভাবে কেউ খেজুর গাছ লাগায় না। প্রাকৃতিকভাবেই এসব খেজুরগাছ জন্ম নিয়েছে। পতিত জমি, ভিটা, জমির আইলসহ বিভিন্ন স্থানে এসব খেজুর গাছের দেখা মেলে। একটি সময় এ জেলায় বিপুল সংখ্যক খেজুর গাছ ছিল।
খেজুর গাছের বয়স বাড়ার কারণে সব গাছ থেকে রস উৎপাদনও হয় না। আবার কিছু কিছু খেজুর গাছ আছে দেখতে অনেক মোটা তাজা হলেও সেই গাছ থেকে রস পাওয়া যায় না।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, নভেম্বর থেকে শুরু করে মোটামুটি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খেজুর রস সংগ্রহ করা যায়। ইতোমধ্যেই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গাছিরা এই রস সংগ্রহে মাঠে নেমে পড়েছেন।
সবখবর/ আওয়াল
Leave a Reply