খুলনা : সোমবার খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার বাজুয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মনোরঞ্জন বৈদ্য বলেন, বুকভরা আশা নিয়ে ধান চাষ করেছিলাম। সোনালি ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। সংসার পরিচালনার সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে সব শেষ হয়ে গেছে মাথায় হাত দিয়ে হতাশা ও দুশ্চিন্তায় সময় ক্ষেপণ ছাড়া এখন অন্য কোনো উপায় নেই।
একই উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের বাসিন্দা ইমরান আলম বলেন, বুলবুলের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষিক্ষেত, শীতকালীন সবজি, ধানের ক্ষেতে। পানিতে সব তলিয়ে গেছে। এতে এ অঞ্চলের কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো। এ যেন পাকা ধানে মই দিয়ে গেলো ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। একই অবস্থায় কয়রা, ডুমুরিয়া, রূপসা ও পাইকগাছার।
বুলবুলের প্রভাবে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে পাকা ও আধাপাকা ধান তলিয়ে যাওয়ায় সেগুলো দ্রুত কেটে ঘরে তুলতে না পারলে ফলনে ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকায় ক্ষেতের ধান হেলে মাটির সঙ্গে বিছিয়ে পড়েছে। বুলবুলের তাণ্ডবে হেলে পড়েছে আমন ধান।
ডুমুরিয়া উপজেলার পাঁচ নম্বর আটলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নয় নম্বর কুলবাড়ীয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম মুন্না বলেন, বুলবুলের তাণ্ডবে জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। লালশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালংশাক, করল্লা, উস্তে, ক্ষিরা, বেগুন, মুলাসহ বিভিন্ন গাছ বাতাসের তোড়ে কাঁত হয়ে জমিতে পড়ে রয়েছে। শীতকালীন সবজি ও আমন ফসলের জমিতে পানি জমে আছে।
এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডুমুরিয়ার কুলবাড়িয়া, বরাতিয়া, গোবিন্দকাঠি, মঠবাড়িয়া এলাকার চাষিরা। এসব এলাকার কৃষকরা ঋণ নিয়ে জমিতে সবজির চাষ করেছিলেন। সবচেয়ে বেশি পেঁপে গাছের ক্ষতি হয়েছে। সব পেঁপে গাছ ভেঙে গেছে।পেঁপে গাছ ভেঙে গেছে।তিনি বলেন, ডুমুরিয়ার কৃষকরা অনেক আশা নিয়ে শীতকালীন সবজির চাষ করেছেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র তাণ্ডবে তাদের সে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় এসব কৃষকের মাথায় হাত উঠে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক পংকজ কান্তি মজুমদার বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র প্রভাবে খুলনা জেলায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে ধান ও ৮৬৪ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ধানে ক্ষতি হয়েছে দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটায়। আর জেলার প্রায় সব উপজেলায় সবজিতে ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ডুমুরিয়ায়। এছাড়া কলা, পান ও পেঁপেতেও ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, মাঠে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকদের ক্ষতিপূরণের জন্য তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে। ক্ষতি নিরূপণ করে কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে। বুলবুলের তাণ্ডবে পানের বরজে ক্ষতি।
রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, ধানের চেয়ে রূপসায় পানের বরজে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ২১৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৩০ হেক্টর জমিতে পানের বরজে ক্ষতি হয়েছে। এ উপজেলায় পেঁপে বাগানের অধিকাংশ গাছ ভেঙে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া শীতকালীন শাকসবজিরও কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ পরবর্তী মাঠ পরিদর্শন করা হয়েছে। চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সবখবর/ আওয়াল