ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিবেদিত প্রাণ হয়ে দেশের জন্য কাজ করছি। ইনশাল্লাহ, প্রতিটি পরিবারকে দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্ত করবো।
বৃহস্পতিবাররাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত উন্নয়ন মেলা ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
দেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আর কেউ কখনো পেছনে টানতে পারবে না। আমরা ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়তে সক্ষম হয়েছি। এবার সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৫-০৬ সালে দেশে দারিদ্যের হার ছিল ৪১ ভাগ। আজ তা ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। এটাকে অন্তত ১৫ থেকে ১৬ ভাগের মধ্যে আমরা নিয়ে আসতে চাই। বাংলাদেশ যেন আর দরিদ্র না থাকে, বাংলাদেশ যেন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চলতে পারে, সেভাবে আমরা একটা হিসাব করেছি। ইনশাল্লাহ, আমরা তা করতে পারবো।
সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে, সেই পরিকল্পনাও আমরা তৈরি করে দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে, এটা ধরে রেখে আমরা এগিয়ে যাবো। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। ২০৭১ সালে আমি যখন বেঁচে থাকবো না, যারা থাকবে তারা এমন একটা দেশ পাবে, ঠিকই সোনার বাংলার নাগরিক হবে। ২১০০ সাল পর্যন্ত ডেল্টা প্ল্যান করেছি। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতির উদ্দেশ্যই হচ্ছে এই যে, বাংলাদেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে তার স্বপ্ন ছিল এই দেশকে তিনি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে গড়বেন। শুধু ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত করা নয়, বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, সম্মানের সঙ্গে চলবে।
তিনি আরো বলেন, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা, নারীদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা, দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ, কৃষকদের সার ও কৃষি উপকরণগুলো সহজলভ্য করা, ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ, গৃহায়ণ তহবিল থেকে দরিদ্রদের সহায়তা, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করাসহ সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রতিটি মানুষের আবাসন নিশ্চিতে সরকারের কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষকে আমরা থাকার জায়গা করে দেবো। আমাদের হিসাব রয়েছে, কোন এলাকায় কত মানুষ গৃহহারা। তাদের আমরা ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি।
বস্তিবাসীদের জন্য সরকারের ঘরে ফেরা কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরে যত বস্তি রয়েছে, এগুলো আমি সার্ভে করিয়েছিলাম। তারা যদি নিজের গ্রামে ফিরে যেতে চায়, আমরা ঘর তৈরি করে দেবো, ছয় মাস ভিজিএফের মাধ্যমে বিনা পয়সায় খাদ্য দেবো। তারা নিজের গ্রামে গিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে, বস্তিতে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে না।
তিনি বলেন, আমি এই কর্মসূচির নাম দিয়েছি ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি। সেভাবে তাদের পুনর্বাসনের একটা উদ্যোগ আমরা নিয়েছিলাম, দারিদ্র্যের হাত থেকে মানুষকে তুলে আনার সেই চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।
পিকেএসএফ-এর অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্যে পিকেএসএফ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু, এক সময় ‘ক্ষুদ্রঋণ’ কার্যক্রমই ছিল এর প্রধান কাজ। আমরা একে ক্ষুদ্রঋণের গণ্ডি থেকে বের করে এনেছি। সামগ্রিক উন্নয়নের দিকে পিকেএসএফ কাজ করে যাচ্ছে।
১ কোটি ৪০ লাখ দরিদ্র ও নিম্নআয়ের পরিবারকে পিকেএসএফ বিভিন্ন কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
Leave a Reply